সিটিজেন ডেভেলপমেন্ট সর্বশক্তিমান নয়, এটি ‘খসড়া উন্নয়ন’ ৫/৭
ভূমিকা
চতুর্থ পর্বে আমরা দেখেছি, কোডে অনুবাদ না করা সম্পদ ভবিষ্যতের নেতিবাচক উত্তরাধিকার হয়ে থাকে। এবার প্রশ্ন করি—সিটিজেন ডেভেলপমেন্ট কি প্রোডাকশন সিস্টেম তৈরি করার মাধ্যম?
উত্তর স্পষ্ট, সিটিজেন ডেভেলপমেন্ট প্রোডাকশন বহন করার ব্যবস্থা নয়। এর সারমর্ম হল ব্যবহারকারী দৃষ্টিভঙ্গির রিকোয়ারমেন্টকে “চলমান রূপে” নামিয়ে আনা খসড়া উন্নয়ন।
এই দৃষ্টিভঙ্গি না নিয়ে “সিটিজেন ডেভেলপমেন্ট = যে কেউ সঙ্গে সঙ্গে সিস্টেম বানাতে পারবে” মনে করলে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে, আবারও নেতিবাচক উত্তরাধিকার ঢালাও তৈরি হয়। তাহলে “খসড়া উন্নয়ন” বলতে কী বোঝায়, কীভাবে তা কাজে লাগানো উচিত—সেটি গুছিয়ে দেখি।
সিরিজের সূচি
- সিটিজেন ডেভেলপমেন্টের ভবিষ্যৎ—ইতিহাস, বর্তমান, জেনারেটিভ এআই এবং তার পরবর্তী পথ ০/৭
- সিটিজেন ডেভেলপমেন্ট কি EUC-এর পুনরাবৃত্তি?── ‘কামি এক্সেল’ থেকে পাওয়া ইতিহাসের শিক্ষা ১/৭
- কামি এক্সেল কি সত্যিই খলনায়ক?—উদ্ধারকর্তা থেকে নেতিবাচক উত্তরাধিকার ২/৭
- আধুনিক সিটিজেন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যাটফর্মের আলো ও ছায়া ৩/৭
- জেনারেটিভ এআই যে লেগাসি বাঁচায়, যে লেগাসি ছেড়ে দেয় ৪/৭
- সিটিজেন ডেভেলপমেন্ট সর্বশক্তিমান নয়, এটি ‘খসড়া উন্নয়ন’ ৫/৭ (এই পর্ব)
- দৃষ্টিভঙ্গির বিচ্যুতি নেতিবাচক উত্তরাধিকার বাড়ায় ৬/৭
- লেগেসি জন্ম নিতেই থাকবে, তারপরও তাকে বশে আন──সিটিজেন ডেভেলপমেন্টের ভবিষ্যৎচিত্র ৭/৭
খসড়া উন্নয়নের মূল্য কী
সিটিজেন ডেভেলপমেন্টে মাঠপর্যায়ে বানানো অ্যাপ বা টুলকে প্রায়ই “অসম্পূর্ণ” কিংবা “অপরিণত” বলা হয়। কিন্তু সেই “অপরিণততাই” আসল মূল্য।
ব্যবহারকারীর চাহিদা স্পষ্ট হয়
নো- বা লো-কোডে সেলস টিম বানানো একটি কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ ভাবুন। সেখানে ব্যবহারকারীর দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা “এভাবে না হলে ঝামেলা” এমন অন্তর্দৃষ্টি ফুটে ওঠে।
- ইনপুট ফিল্ডের দানাদারতা
- তালিকা পর্দায় কীভাবে উপস্থাপন করতে চায়
- বোতামের অবস্থান ও নেভিগেশনের স্বাভাবিকতা
এসব কেবল “রিকোয়ারমেন্ট ডকুমেন্টে” ধরা যায় না। কাগজে লিখলে মাঠের চাহিদার সূক্ষ্মতা ও “কাজের অনুভূতি” প্রায় হারিয়ে যায়। চলমান প্রোটোটাইপ থাকলেই বোঝা যায় “এভাবে হলে ব্যবহারযোগ্য”, “না, বাস্তবে অসুবিধা হবে”।
ভুল ধারণা ও ঘাটতি দ্রুত ধরা পড়ে
চলমান খসড়া থাকলে আরও বোঝা যায়— “এখানে সার্চ ফাংশন না থাকলে চলবে না”, “অপ্রুভাল ফ্লো তিন ধাপ নয়, দুই ধাপ হওয়া উচিত”— এমন ভুল ব্যাখ্যা বা ঘাটতি আগেভাগে ধরা পড়ে।
আগে সিস্টেম উন্নয়নে অনেক সময় “রিকোয়ারমেন্ট ডক পড়ে বিশেষজ্ঞরা কল্পনায় ডিজাইন” করতেন। ফলে শেষ হওয়ার পর মাঠ বলত “এটা তো ভাবনার সঙ্গে মেলেনি”, আর পুনরায় কাজ করা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। সিটিজেন ডেভেলপমেন্ট এই নির্বুদ্ধিতাপূর্ণ পুনরাবৃত্তি কমানোর শক্তিশালী অস্ত্র হতে পারে।
প্রোডাকশনে তোলার ফাঁদ
তবু খসড়াকে 그대로 প্রোডাকশনে নেওয়া যাবে না। সেখানে বড় ফাঁদ লুকিয়ে থাকে।
- স্কেলেবিলিটি: ছোট বিভাগে চলে, কিন্তু সারা কোম্পানিতে আনলেই পারফরম্যান্স সীমায় পৌঁছে যায়।
- সিকিউরিটি: অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ বা লগ ব্যবস্থাপনা দুর্বল, নিরীক্ষা বা আইনসম্মততা টিকিয়ে রাখা যায় না।
- রক্ষণাবেক্ষণযোগ্যতা: ব্যক্তিনির্ভরতা বেড়ে যায়, নির্মাতা বদলি বা অবসর নিলে ব্ল্যাক বক্সে পরিণত হয়।
অর্থাৎ “খসড়ার মূল্য আছে” আর “খসড়াকে প্রোডাকশনে তোলা যায়”—এই দুটোর পার্থক্য বিশাল। কামি এক্সেল যে একসময় উদ্ধারকর্তা হয়ে শেষে নেতিবাচক উত্তরাধিকার হলো—এটা সেই একই চিত্র পুনরাবৃত্তি।
বিশেষজ্ঞ ও নাগরিকের ভূমিকা বণ্টন
তাহলে সিটিজেন ডেভেলপমেন্টের ফলাফল কীভাবে ব্যবহার করা উচিত? উত্তর পরিষ্কার।
- নাগরিক = খসড়া তৈরি: ব্যবহারকারীর দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবরূপ দেওয়া, প্রোটোটাইপ দেখানো।
- বিশেষজ্ঞ = পরিষ্কার লেখা: অ-কার্যকরী প্রয়োজন (বিস্তৃততা, নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণযোগ্যতা) পূরণ করে পুনর্গঠন।
এই ভূমিকা বণ্টন কঠোরভাবে মানলে উভয়ের শক্তি সর্বাধিক হয়। নাগরিকরা “মাঠের সরাসরি অনুভূতি” টুলে ঢেলে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা “গুণমান ও স্থায়িত্ব” নিশ্চিত করে পরিষ্কার লেখা সামলায়।
আগের উন্নয়ন পদ্ধতি ছিল “রিকোয়ারমেন্ট ডকুমেন্টের ওপর নির্ভর করে কল্পনা থেকে ডিজাইন”। খসড়া থাকলে প্রথম থেকেই উচ্চ রেজোলিউশনের আলোচনা সম্ভব। ফলে উন্নয়নের দক্ষতা বাড়ে, ফলাফলের গুণমানও উন্নত হয়।
গভর্ন্যান্সে কী ধরে রাখতে হবে
সিটিজেন ডেভেলপমেন্টকে স্বাস্থ্যকরভাবে কাজে লাগাতে সংস্থাগত নিয়ম আবশ্যক।
- সুস্পষ্টতা: “সিটিজেন ডেভেলপমেন্টের ফলাফল প্রোটোটাইপে সীমাবদ্ধ থাকবে, ব্যবহারের ক্ষেত্র সীমিত” বলে ঘোষণা করা।
- হিসাব-নিকাশ: পাশে ফেলে রাখা অ্যাপ বা RPA নিয়মিত গুছিয়ে ফেলা, বাতিল করার প্রক্রিয়া রাখা।
- স্থানান্তর প্রক্রিয়া: কার্যকর খসড়া অবশ্যই আইটি বিভাগে হস্তান্তর করে পরিষ্কার লেখার পর প্রোডাকশনে নেওয়ার ব্যবস্থা স্থাপন করা।
এই ধরনের গভর্ন্যান্স থাকলে কামি এক্সেলের মতো নেতিবাচক উত্তরাধিকার আবার তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বড়ভাবে কমে। উল্টোভাবে, এই নিয়ম ছাড়া সিটিজেন ডেভেলপমেন্ট কেবল “বুনো অ্যাপ কারখানা” হয়ে উঠবে এবং সংস্থার প্রযুক্তিগত ঋণ বাড়াতে থাকবে।
সংক্ষিপ্তসার
সিটিজেন ডেভেলপমেন্ট “যে কেউ প্রোডাকশন সিস্টেম বানাতে পারবে” এমন সর্বশক্তিমান ব্যবস্থা নয়। কিন্তু “খসড়া” হিসেবে ব্যবহার করলে রিকোয়ারমেন্টের ভুল ধারণা বা ঘাটতি কমে, ব্যবহারকারীর দৃষ্টিভঙ্গি যথেষ্ট অন্তর্ভুক্ত হয়।
প্রোডাকশন সামলায় বিশেষজ্ঞ, খসড়া আঁকে নাগরিক। এই ভূমিকা বণ্টন কঠোরভাবে মানলেই সিটিজেন ডেভেলপমেন্ট নেতিবাচক উত্তরাধিকার নয়, ভবিষ্যতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সূচনা হয়ে ওঠে।
অর্থাৎ সিটিজেন ডেভেলপমেন্টের সত্যিকার তাৎপর্য “গণতান্ত্রিক রিকোয়ারমেন্ট ডেফিনিশন প্রক্রিয়ায়”। এই বোঝাপড়া থাকলেই সিটিজেন ডেভেলপমেন্ট সংস্থার স্থায়ী শক্তি হয়।
পরবর্তী পর্ব: দৃষ্টিভঙ্গির বিচ্যুতি কীভাবে নেতিবাচক উত্তরাধিকার বাড়ায় ৬/৭