ভূমিকা

“সিটিজেন ডেভেলপমেন্ট হলো DX যুগের নতুন ডেভেলপমেন্ট স্টাইল”—এমন প্রচার ব্যাপক। কিন্তু ইতিহাসে তাকালে বোঝা যায়, এটি মোটেও নতুন কিছু নয়। ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে “EUC (End User Computing)” ধারণা আসে, আর ১৯৮০-এর দশকে স্প্রেডশিট সফটওয়্যার (Lotus 1-2-3 ও Excel) জনপ্রিয় হতে শুরু করে—এর ফলে মাঠ পর্যায়ের মানুষ নিজেই সিস্টেম বানাতে থাকে।

এই ধারার প্রতীকী উদাহরণই পরে “কামি এক্সেল” (জাপানি নেট সংস্কৃতিতে ‘কামি এক্সেরু’ উচ্চারণে দেবতুল্য এক্সেল বোঝাতে ব্যবহৃত) নামে পরিচিত হয়। সিটিজেন ডেভেলপমেন্টকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে ইতিহাসকে সরাসরি দেখতে হবে। সেখানে স্বল্পমেয়াদি সাফল্য এবং অবশ্যম্ভাবী দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক উত্তরাধিকারের এক সর্বজনীন প্যাটার্ন লুকিয়ে আছে।


সিরিজের সব পর্ব


EUC──মাঠ পর্যায়ে সিস্টেম বানানোর শুরু

“EUC (End User Computing)” অর্থ হল, যে কাজ আগে বিশেষায়িত IT বিভাগ করত, সেটি এখন শেষ ব্যবহারকারী নিজে সরাসরি করে।

তখনকার প্রেক্ষাপট ছিল এমন:

  • IT বিভাগের সম্পদ সীমিত—সব ব্যবসায়িক সিস্টেম ইন-হাউসে তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের মতো অবকাশ ছিল না।
  • ১৯৭০-এর দশকের শেষ থেকে পার্সোনাল কম্পিউটার ছড়িয়ে পড়ে; ১৯৮৩ সালে Lotus 1-2-3 আসে, পরে Excel যোগ দেয়। ফলে অ-ইঞ্জিনিয়ারদের হাতেও কাজের “উপকরণ” চলে আসে।
  • মাঠ পর্যায়ের লোকজন নিজ কাজের সঙ্গে মানানসই ক্ষুদ্র সমাধান বানাতে শুরু করে এবং উৎপাদনশীলতার নাটকীয় উন্নতি টের পায়।

প্রথম দৃষ্টিতে এটি ছিল এক “উৎপাদনশীলতার বিপ্লব”। কিন্তু সেই আউটপুট সংগঠনের গভর্ন্যান্সের বাইরে থেকে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে লেগাসি সম্পদ হয়ে ঝুলে থাকে।


‘কামি এক্সেল’── ত্রাণকর্তা থেকে বোঝা

“কামি এক্সেল” বলতে স্প্রেডশিটে তৈরি অত্যন্ত বিশাল ও বহুমুখী Excel ফাইলকে বুঝায়। শব্দটি এসেছে জাপানি নেট স্ল্যাং “নেশিন” থেকে—হিরাগানা-কাতাকানা আর কাংজি মিলিয়ে ‘কামি’ (দেব) বোঝানোর এক ধরণের চটুল লেখা—অর্থাৎ ‘অভূতপূর্ব এক্সেল’-কে সামান্য ব্যঙ্গ করে বলা।

সাধারণ ‘কামি এক্সেল’-এর লক্ষণগুলো হলো:

  • যা আসলে ডাটাবেস বা অ্যাপ্লিকেশনে থাকা উচিত, সবই Excel শিটে গুঁজে দেওয়া হয়।
  • হাজার হাজার লাইনের ম্যাক্রো, ডজন ডজন শিট, জটিল আন্তঃ-রেফারেন্স করা ফর্মুলা।
  • অস্থায়ীভাবে এটি “মাঠের ত্রাণকর্তা” হয়ে উৎপাদনশীলতা লাফিয়ে বাড়ায়।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা বিস্ফোরিত হয়:

  1. ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা: নির্মাতা ছাড়া কেউ পুরো চিত্র বোঝে না।
  2. রক্ষণাবেক্ষণ অসম্ভব: জটিলতা এত বেশি যে অন্যরা হাত দিতে পারে না।
  3. সামঞ্জস্য সমস্যা: Excel সংস্করণ বা OS ভেদে হঠাৎ কাজ করা বন্ধ।

এভাবে ‘কামি এক্সেল’ “স্বল্পমেয়াদি সাফল্য” ও “দীর্ঘমেয়াদি বোঝা”—দুই বিপরীতের প্রতীক হয়ে ওঠে, আজও যাকে পরিহারযোগ্য বলে মনে করা হয়।


নেতিবাচক উত্তরাধিকারের প্যাটার্ন

EUC থেকে ‘কামি এক্সেল’, আর সেখান থেকে আজকের সিটিজেন ডেভেলপমেন্ট—একই প্যাটার্ন বারবার চোখে পড়ে।

  • প্রাথমিক পর্যায়: মাঠের সমস্যা তড়িৎ সমাধান করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
  • মধ্য পর্ব: সম্পদ জমতে থাকে, ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দুতে ঢুকে পড়ে।
  • দীর্ঘমেয়াদ: নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, স্থানান্তর কঠিন হয়, “নেতিবাচক উত্তরাধিকার”রূপে জমে থাকে।

এই কাঠামো প্রযুক্তির নয়, বরং মানুষের আচরণ প্যাটার্নে নিহিত। স্বল্পমেয়াদি সাফল্য সংগঠনকে প্রণোদিত করে, দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি হালকাভাবে নিতে শেখায়।


সিটিজেন ডেভেলপমেন্ট কি EUC-এর পুনরাবৃত্তি?

আজকের সিটিজেন ডেভেলপমেন্ট (নো-কোড/লো-কোড/RPA ইত্যাদি) মুখে “ক্লাউড”, “API ইন্টিগ্রেশন”, “এআই সহায়তা”—এসব আধুনিক শব্দ লাগানো।

কিন্তু মৌল কাঠামো EUC-এর মতোই:

  • IT বিভাগের ঘাটতি পূরণে মাঠ পর্যায় নিজেই সমাধান বানায়।
  • স্বতঃস্ফূর্ত UI ও প্রচুর টেমপ্লেটের কারণে দ্রুত ফল পাওয়া যায়।
  • গভর্ন্যান্স না থাকলে এক সময় ‘কামি এক্সেল’-এর মতো নেতিবাচক সম্পদে রূপ নেয়।

তবে আধুনিক সিটিজেন ডেভেলপমেন্টে EUC যুগে না থাকা কিছু শক্তি আছে:

  • ক্লাউড প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তা ও অনুমতি নিয়ন্ত্রণ।
  • API সংযোগের মাধ্যমে অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে ইন্টিগ্রেশন।
  • এন্টারপ্রাইজ পণ্যগুলো গভর্ন্যান্সকে মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয় বলে দাবি।

তাই IT ভেন্ডররা বলবে, এটি সরল “EUC-এর পুনরাবৃত্তি” নয়, বরং “উন্নত EUC”। কিন্তু ব্যবহারকারী মানুষ তো বদলায়নি; অর্ধশতকে মানুষ বিবর্তিত হয় না। শিক্ষাগুলো কাজে না লাগালে আবারও নেতিবাচক উত্তরাধিকার জন্ম নেবে।


এই পর্বের সারাংশ

  • সিটিজেন ডেভেলপমেন্ট নতুন কিছু নয়; EUC ধারার “কমপক্ষে মার্কেটিং-এ উন্নত” পুনরাগমন।
  • ‘কামি এক্সেল’-এর ইতিহাস স্বল্পমেয়াদি সাফল্য বনাম দীর্ঘমেয়াদি বোঝার ক্লাসিক উদাহরণ।
  • কাঠামোটি প্রযুক্তির নয়, মানুষ ও সংগঠনের প্রণোদনা নকশা থেকে জন্ম নেয়।
  • আধুনিক সিটিজেন ডেভেলপমেন্ট ক্লাউড, API, গভর্ন্যান্স ফিচার দাবি করলেও, এসব মূলত টুল দিয়ে সমাধান করা যাবে না—মানবিক দিকই সিদ্ধান্ত নেয়।

পরবর্তী পর্ব: ‘কামি এক্সেল’ সত্যিই দোষী কি?── ত্রাণকর্তা থেকে নেতিবাচক উত্তরাধিকারে