“ব্লকচেইন দুর্বলদের ঢাল নাকি শক্তিশালীর বর্ম”: 🧙‍♂️ (ডক্টর) এবং 🐣 (ছাত্র) এর কথোপকথন থেকে ভাবনা

ব্লকচেইন বুঝি মনে হলেও বেশ কিছু জায়গায় ধোঁয়াশা ছিল। তাই ChatGPT-র সঙ্গে প্রশ্নোত্তর করে দেখলাম, আর তার ফল ঘষেমেজে এই সংলাপ আকারে সাজালাম। হ্যাঁ, এটা কাজে দেবে—ভালই পড়াশোনা হলো।

সংলাপ: 🧙‍♂️ (ডক্টর) এবং 🐣 (ছাত্র), ব্লকচেইনের অস্তিত্বের অর্থ ঘিরে


🐣 (ছাত্র): “🧙‍♂️ (ডক্টর), ব্লকচেইন ব্যাপারটা ইদানীং অনেক শুনি, কিন্তু আসলে কী? শুনি যেন ‘ক্রিপ্টোকারেন্সিতে রাতারাতি ধনী হওয়ার মন্ত্র’?”

🧙‍♂️ (ডক্টর): “মন্ত্র নয়। বরং ধরো, সারা বিশ্বে বিলিয়ে দেওয়া এক ‘ঘূর্ণায়মান খাতা’। সেখানে যা লেখা হয়, কেউ মুছতে পারে না, আর সংশোধনও সম্ভব নয়।”

🐣 (ছাত্র): “কিন্তু ডক্টর, আমাদের পাড়ার স্যার যদি খাতায় আঁকিবুকি করে, সব মাটি না?”

🧙‍♂️ (ডক্টর): “সেখানেই পার্থক্য। ব্লকচেইনে আঁকিবুকিও ‘সরকারি ইতিহাস’ হয়ে যায়। একরকম বলতে পারো, এটা দুনিয়ার সবচেয়ে দমবন্ধ করা ঘূর্ণায়মান খাতা।”


দুর্বলদের রক্ষাকবচ?

🐣 (ছাত্র): “এমন খাতা সাধারণ মানুষের কাজে লাগে নাকি?”

🧙‍♂️ (ডক্টর): “যেমন ধরো, যেখানে ব্যাংক ইচ্ছে করলে আমানত ফ্রিজ করে, কিংবা যেখানে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়—সেখানে এটা অস্ত্র। পরিবর্তন-অযোগ্য রেকর্ড দুর্বলদের পাশে দাঁড়ায়।”

🐣 (ছাত্র): “কিন্তু বাস্তবে যদি সরকার বলে ‘এই খাতাই অফিসিয়াল’, সবাই বাধ্য হয়ে মানবে না?”

🧙‍♂️ (ডক্টর): “…তীক্ষ্ণ প্রশ্ন। ঠিকই, প্রমাণ তো কেবল প্রমাণ; সেটার ব্যবহার নির্ভর করে ক্ষমতার উপর। ব্লকচেইন দুর্বলদের ঢালও, শক্তিশালীর বর্মও হতে পারে।”

🐣 (ছাত্র): “শোনায় এমন, যেন ‘সাধারণ মানুষকে বাঁচানোর চুক্তি’ শেষে পড়তে না পারা লোককে ঠকানোর কাগজ হয়ে যায়।”

🧙‍♂️ (ডক্টর): “ঠিক, ইতিহাসের সেই পুনরাবৃত্তিও এখানে আছে।”


📌 টীকা: অপরিবর্তনীয়তা ও দুর্বল রক্ষা ব্লকচেইন “পরবর্তীতে ক্ষমতাবান কেউ রেকর্ড বদলাতে পারবে না”—এই কারণে দুর্বলদের সহায় বলে মনে করা হয়। কিন্তু বাস্তবে “কোন চেইনকে সত্য ধরা হবে” তা ক্ষমতাই ঠিক করে, ফলে বিদ্যমান শক্তিকেই জোরদার করার ঝুঁকিও আছে।


মুছতে না পারা ডেটার সমস্যা

🐣 (ছাত্র): “ধরুন কেউ রিভেঞ্জ পর্নের মতো কিছু লিখে দিল—ওটা তো মুছতে পারবেন না, তাই তো?”

🧙‍♂️ (ডক্টর): “ঠিকই। অন-চেইনে সরাসরি ঢুকলে প্রায় অসম্ভব। তাই বাস্তবে IPFS বা Arweave-এ ডেটা রেখে, ব্লকচেইনে শুধু রেফারেন্স রাখা হয়।”

🐣 (ছাত্র): “কিন্তু ডেটা তো থেকে গেল! যেন ফ্রিজের এক কোণে পুরোনো আচার গুঁজে রাখা—চোখে না পড়লেও গন্ধ যায় না।”

🧙‍♂️ (ডক্টর): “উপমা সাধারণ হলেও নিখুঁত। অপরিবর্তনীয়তা অস্ত্র যেমন, তেমনই অভিশাপ।”


📌 টীকা: ব্লকচেইনে ডেটা মুছে ফেলার জটিলতা

  • ডেটা সরাসরি ব্লকচেইনে রাখলে তা মুছতে প্রায় অসম্ভব।
  • বাস্তবে বাহ্যিক স্টোরেজে (যেমন IPFS) ডেটা রেখে, চেইনে কেবল হ্যাশ বা লিংক রাখা হয়।
  • কিন্তু ডেটা আসলে থেকে যায়; শুধু “দৃষ্টির আড়াল” করা যায়।

পাংকচারের ভবিষ্যৎ

🐣 (ছাত্র): “ভারী ডেটা এড়িয়ে গেলেও লেনদেনের রেকর্ডে তো চেইন ফুলে যাবে, না? খাতাটাই এত পুরু হয়ে যাবে যে বহন করা দায়।”

🧙‍♂️ (ডক্টর): “ঠিক। তাই ‘লেয়ার ২’ বা ‘শার্ডিং’ দিয়ে প্রসেস ভাগ করা হচ্ছে। কিন্তু এগুলোও পূর্ণ সমাধান নয়।”

🐣 (ছাত্র): “ডেটা ছড়িয়ে দিলে যদি কোনো নোড বাদ পড়ে? তখন তো তথ্য হারিয়ে গিয়ে পুরো সিস্টেমের নিখুঁততা ভেঙে যেতে পারে?”

🧙‍♂️ (ডক্টর): “তাই অর্থনৈতিক প্রণোদনা আর ক্রিপ্টো কৌশল দিয়ে ‘ডেটা সত্যিই আছে’ তা প্রমাণের ব্যবস্থা করা হয়।”


📌 টীকা: স্কেলেবিলিটির সমস্যা

  • ব্লকচেইনে লেনদেন ইতিহাস ক্রমাগত বাড়ে, ফলে ফুল নোড রক্ষা করা কঠিন।
  • সমাধান হিসেবে “লেয়ার ২ (অফ-চেইন প্রসেসিং)” বা “শার্ডিং (চেইন ভাগ করা)” নিয়ে কাজ চলছে।
  • তবু মূল সমস্যার পুরো সমাধান এখনো হয়নি।

অস্তিত্বের মানে কী?

🐣 (ছাত্র): “হুঁ… কিন্তু এত সমস্যা! ব্লকচেইন আসলে কাজে দেয় কী?”

🧙‍♂️ (ডক্টর): “বাস্তবে যে ক্ষেত্রগুলোতে ফল দিচ্ছে, সেটা সীমিত—আন্তর্জাতিক টাকা পাঠানো, সাপ্লাই চেইনে পরিবর্তন ঠেকানো, আর্থিক স্বয়ংক্রিয়তা (DeFi)। কিন্তু সারমর্ম হলো ‘কাউকে বিশ্বাস করা যায় না এমন পরিস্থিতিতে সম্মতি গড়া’—এই পরীক্ষানিরীক্ষা।”

🐣 (ছাত্র): “কিন্তু সম্মতি তো বাস্তবে ক্ষমতা দিয়ে বলপ্রয়োগেও তৈরি হয়। ক্ষমতা যদি অফিসিয়ালি ব্লকচেইন ব্যবহার করে, তখন জোর করে নেওয়া সম্মতিকে বদলানো যায় না এমন খাতায় বেঁধে আরও শক্তিশালী করবে না?”

🧙‍♂️ (ডক্টর): “অস্বীকার করতে পারি না। তাই বলেছিলাম, ব্লকচেইন দুর্বলদের ঢাল আবার শক্তিশালীর বর্মও।”


📌 টীকা: বাস্তব সমাজের সাথে সংযোগ ব্লকচেইনে সম্মতি প্রযুক্তিগতভাবে নিশ্চিত হলেও, বাস্তবে কার্যকর করতে সমাজ ও ব্যবস্থার সম্মতির প্রয়োজন। ক্ষমতা গ্রহণ করলে তা শক্তির হাতিয়ার হয়, আর উপেক্ষা করলে অকার্যকর হয়ে যায়।


ব্লকচেইন কি ক্ষমতার বিরুদ্ধে?

🐣 (ছাত্র): “শেষ পর্যন্ত, ক্ষমতা তো মানুষ মেনেই টিকে থাকে। ব্লকচেইন না থাকলেও সবাই একসাথে অগ্রাহ্য করলে ক্ষমতা বিলীন হয়ে যাবে না?”

🧙‍♂️ (ডক্টর): “তত্ত্বে তাই। ক্ষমতা মানুষের সম্মতি থেকেই জন্মায়। ব্লকচেইন প্রস্তাব করে ‘মানুষ নয়, কোডকে মান্য করা সম্মতি’। কিন্তু মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীনতা সহ্য করতে পারে না। DAO-র মতো বিকেন্দ্রীকৃত সংগঠনেও বড় টোকেনধারীরাই প্রায়শ নেতা হয়ে যায়।”

🐣 (ছাত্র): “অর্থাৎ ‘ক্ষমতার খেলা’ কখনোই শেষ হবে না।”

🧙‍♂️ (ডক্টর): “হ্যাঁ। তাই ভাবি, ক্ষমতাকে মুছে ফেলা যায় না, কিন্তু পুরোপুরি স্বচ্ছ ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য করতে ব্লকচেইন কাজে লাগানো যেতে পারে।”


উপসংহার

ব্লকচেইন দুর্বলদের ঢালও, শক্তিশালীর বর্মও হতে পারে। অপরিবর্তনীয়তা যেমন ন্যায়প্রমাণ, তেমনই অনিয়ন্ত্রিত বদ্ধতার জন্মস্থান।

শেষমেশ, হয়তো এটা মানুষ, ক্ষমতা ও স্বাধীনতার সম্পর্ক প্রতিফলিত করা একটি আয়না মাত্র।


প্রযুক্তিগত পরিশিষ্ট: ব্লকচেইনের পেছনের উপাদান

  • কনসেনসাস অ্যালগরিদম

    • বিটকয়েনের Proof of Work (PoW) গণনার মাধ্যমে “সংখ্যাগরিষ্ঠতা” নিশ্চিত করে, ফলে পরিবর্তন ঠেকায়।
    • Ethereum ইত্যাদিতে ব্যবহৃত Proof of Stake (PoS) হলো স্টেক করা সম্পদের ওপর ভিত্তি করে “অর্থনৈতিক জামানত”-চালিত সম্মতি।
    • উদ্দেশ্য একটাই—“কাউকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায় না এমন পরিবেশেও সম্মতি গড়া।”
  • হ্যাশ ফাংশন ও পরিবর্তন শনাক্ত

    • প্রত্যেক ব্লকে আগের ব্লকের হ্যাশ থাকে, তাই মাঝখানে কিছু বদলালে চেইন জুড়ে অসামঞ্জস্য ধরা পড়ে।
    • এই “চেইন গঠনই” ডেটার অপরিবর্তনীয়তা নিশ্চিত করে।
  • কি-ক্রিপ্টো ও স্বাক্ষর

    • লেনদেন পাবলিক-কি ক্রিপ্টোগ্রাফিতে সই করা হয়, ফলে প্রেরকের পরিচয় প্রমাণিত থাকে।
    • গোপন চাবি হারালে সম্পদেও প্রবেশাধিকার হারাতে হয়—“সম্পূর্ণ স্ব-দায়িত্ব”।
  • স্কেলেবিলিটি ও লেয়ার ২

    • বিটকয়েনের Lightning Network, Ethereum-এর Optimistic Rollup / zk-Rollup ইত্যাদি অফ-চেইনে লেনদেন জড়ো করে, চেইনে কেবল সারাংশ লেখে।
    • লক্ষ্য, প্রতি সেকেন্ডে শত থেকে হাজার লেনদেন সামলানো।
  • বিতরণকৃত স্টোরেজের ভূমিকা

    • IPFS বা Arweave হল “মুছতে না পারা ডেটা” ব্লকচেইনের সাথে যুক্ত করার পরিচিত উদাহরণ।
    • হ্যাশ লিংকের মাধ্যমে রেফারেন্সড ডেটা বদলালেই ধরা পড়ে।