জেনারেটিভ AI ও আমার উপলব্ধি

এই সাইট তৈরি করা আর প্রতিদিন ChatGPT-র সঙ্গে আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে।

সেটা হলো, “জেনারেটিভ AI এখনো নিখুঁত নয়।” ভুল উত্তর দেয়, প্রত্যাশামতো আচরণ না করার ঘটনা অনেক। অন্তত এখনই মানুষের সরাসরি বিকল্প হয়ে উঠতে পারে না।

কিন্তু একই সঙ্গে যে আইডিয়াগুলোকে এতদিন “জ্ঞান নেই”, “সময় নেই”, “খরচ বেশি” বলে ছেড়ে দিতে হতো, সেগুলো বাস্তবে রূপ দেওয়ার সম্ভাবনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে—এটাও অস্বীকার করা যায় না। আরও বড় কথা, অন্যের ওপর নির্ভর না করেও কাজ এগিয়ে নেওয়া যায়। AI-এর সাহায্য নিচ্ছি ঠিকই, তবুও “একাই এতদূর আসা যায়” এই উপলব্ধি বিরাট।

ব্যবহার না করার ঝুঁকি

এই পরিবর্তন ব্যক্তি ও কোম্পানি—দু’জনের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। জেনারেটিভ AI ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত মানে নিশ্চিতভাবে পিছিয়ে পড়া। ইন্টারনেট বা স্মার্টফোনের মতোই, জেনারেটিভ AI কে কাজে লাগাতে পারা ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতার নতুন লিটেরেসি হয়ে উঠবে।

ইতিহাস দেখায়, বিদ্যুৎ, গাড়ি, ইন্টারনেট—যে প্রযুক্তিই হোক, অনিশ্চয়তায় ভুগে যারা দেরি করেছে তাদের শেষমেশ সরিয়ে দিয়েছে। জেনারেটিভ AI-ও সেই একই পথে হাঁটবে, এটা স্বাভাবিক অনুমান। অর্থাৎ এই ঢেউ মিস করা ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক—দুই ক্ষেত্রেই অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।

নতুন করে জন্ম নেওয়া প্রশ্ন

একদিকে আবার এক ভিন্ন ধরণের সংশয়ও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। সেটা হলো, “যেখানে সবাই সহজে অনেক কিছু করতে পারে, সেখানে কী করা সত্যিই অর্থবহ?”

আগে এমন অনেক কাজ ছিল যেগুলো “কঠিন বলে” মূল্য পেত। বিশেষ জ্ঞান দরকার ছিল, প্রচুর শ্রম দরকার ছিল—তাই তার ফলের দাম ছিল। কিন্তু এখন জেনারেটিভ AI দিয়ে প্রোগ্রাম, লেখা, ডিজাইন—সবই একটা নির্দিষ্ট মানে সবাই করতে পারে।

“সবাই করতে পারে” এমন জিনিসে কতটা মূল্য থাকবে? এই প্রশ্নের ওজন খুব বেশি।

সৃজনশীলতার ম্লান হয়ে যাওয়ার ভয়

অর্থাৎ, AI যত বেশি সাধারণ কাজ কাঁধে নেয়, সৃজনশীলতা বা মৌলিকতাও “সবার নাগালে” চলে আসে। তার মানে বিশ্বের একেবারে শীর্ষ কয়েকজন বাদে বাকিদের জন্য সৃজনশীলতা প্রদর্শন করাই কঠিন হয়ে যাবে, অর্থাৎ অস্তিত্বের অর্থ যেন ম্লান হয়ে যাবে—এই ভয়

AI সব কিছু প্রতিস্থাপন করে না, বরং “মানুষ ছাড়া চলে না” এমন ক্ষেত্রগুলোও সাধারণ বানিয়ে ফেলে, ফলে পার্থক্য করার সুযোগ প্রায় থাকে না। এই ভবিষ্যৎ দৃশ্যই জেনারেটিভ AI-এর সুবিধার পাশাপাশি আসা বড় উদ্বেগ।

বাকি থাকা সংশয়

আমার কাছে এই সংশয় এখনো মুছে যায়নি। জেনারেটিভ AI ইতিমধ্যেই জীবনের ধরণ ও কাজের ধরন কাঁপিয়ে দিতে শুরু করেছে। তাই “AI-কে কিভাবে ব্যবহার করব”, “AI যুগে মানুষ কোথায় দাঁড়াবে”—এই প্রশ্নগুলো ভবিষ্যৎ চিন্তার কেন্দ্রীয় দোটানায় পরিণত হতে পারে।


জেনারেটিভ AI শত্রু নয়; এটি প্রসারিত হওয়ার হাতিয়ার। কিন্তু একই সঙ্গে এটি আমাদের মূল্যবোধ ও পরিশ্রমের অর্থকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

আপনারা এই পরিবর্তনকে কীভাবে দেখছেন?